বিভাগ-গল্প
গল্প-হতেই পারে
রত্না চক্রবর্তী
২৮.৬.২১
মনোজিৎ এর মা রমার একটাই কথা এ ” হতেই পারে না। আমার ছেলে এভাবে কোনমতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। ”
কিন্তু অনেকেই বলছে “হতেই পারে… বউটাও তো এইভাবে আত্মহত্যা করেছিল ”
কিন্তু রমা যে জানে এইভাবে বৌ অনুর ভ্রুছাঁটা ছোট্ট কাঁচি দিয়ে নিজের গলা নলি খুঁচিয়ে আত্মহত্যা করবে এমন প্রেম তার ছেলে বৌএর কোন কালেই ছিল না। দুবেলা রোজ চুলোচুলি হত তাদের মধ্যে, বউ মরলে সে বাঁচে এটাই তার কাছে বড় কথা ছিল। সেই ছেলে বউ মরার কুড়ি দিনের মাথায় ছোট ছেলে রেখে আত্মহত্যা করবে এটা কখনোই হতে পারে না। মুন্নাকে তো সে খুব ভালোবাসত তার ছেলে।”
কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশী বলছে ” হতেও পারে মানুষের মন না মতি।। বউ ছিল খুব ঝগড়াটে দজ্জাল কিন্তু খুব ভোগী আর আওপাতালিও। একটু কেটে পুড়ে গেলেই সইতে পারত না। পাড়া প্রতিবেশী জানিয়ে কেঁদেটেঁদে সারা হত। আত্মহত্যা তার পক্ষে সম্ভব কি? বরকে তো বেশ ভালোবাসতো শোনা যায়, সন্দেহ করেই ঝগড়া অশান্তি করত। ভীষণ সাজতে ভালোবাসত। মরার একটু আগেও ঘরে ছোট কাঁচি দিয়ে ভ্রু ছাঁটছিল। এটা সে বেশ ভালো পারত। কিন্তু একটা ভ্রু ছেঁটে অন্যটা না ছেঁটেই কেউ আত্মহত্যা করে? সংসার ছেড়ে মরার মত মেয়ে অনু ছিল না। সেই বা ছোটছেলে ফেলে আত্মহত্যা করল কি করে? বৌএর মনের ব্যাপার শাউড়ি বুঝবে কি করে! তুমুল ঝগড়া হয়েছিল অবশ্য অনুর বর ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে। বর বৌ দুজনেই খুব মাথা গরম ছিল কিনা। আর সংসার বলতে তো মা, ছেলে আর ছয় বছরের বাচ্চা মুন্নাকে নিয়ে । তাহলে বলতে হয় আত্মহত্যা করে নি, তাহলে রমার ছেলে মনোজিৎই রাগের মাথায় খুন করেছে।
কিন্তু মনোজিৎ তো পাগলের মতো কেঁদেছে কয়দিন। পুলিশ ও তো শেষে ছেড়েই দিল আত্মহত্যা বলে। অনুর ভাইরাও তো কেস করল না। আত্মহত্যা বলে মেনে নিল। মানুষের মন, কখন যে কি করে বসে, তাকে কে জানে ! তবে মনোজিৎ’ই বা আত্মহত্যা করতে পারে না কেন? ”
মৃতা অনু শুধু জানে, যেটা ঘটেছে সেটা জানলে সবাই বলবে হতেই পারে না। কাচার কাপড় জামা ভিজিয়ে রেখে বিকেলে মুন্নার বন্ধু তনিমার জন্মদিন অনুষ্টানে যাবে বলে ভ্রুটা নিজস্ব কায়দায় ছাঁটছিল অনু। এমন সময় তার বর মনোজিৎ ঘরে ঢুকেছিল টেম্পার নিয়ে, ” অনু তুমি পিয়ালীকে কি বলেছো ছেলের স্কুলে গিয়ে , তুমি সব গার্জেনের সামনে ওকে অপমান করেছ, আমাকে জড়িয়ে নোংরা কথা শুনিয়েছ? এত্ত সাহস হয় কি করে তোমার? ”
নির্বিকার ভাবে অনু বলে ” কম বলেছি, এবার যদি ছেনালি করতে দেখি,লোকের সামনে মুখের তোড়ে ন্যাংটা করে দেব বজ্জাত মেয়ে মানুষকে, তোমার পীড়িত ছুটিয়ে দেব “।
মনোজিৎ দাঁত কিড়মিড় করে বলে ” হারামজাদী জুতিয়ে মুখ ভেঙে দেব. ” ব্যাস লেগে গেল দুজনের তাণ্ডব , তারপর মারামারি, কিন্তু কি যে হল মারামারিটা জমতে পারল না। মনোজিতের ধাক্কা খেয়ে ঘাড় গুঁযে পড়ল অনু, বেকায়দায় ভেঙে গেল ঘাড়। খানিক বাদে অনুর যেন হুঁশ ফিরল, সে দেখল সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অথচ তার বর টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে ঘেমে নেয়ে তার শরীরটা অতি কষ্টে তুলে পাখার সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝে গেল সে মরে গেছে।রাগে দু:খে সে পাগল হয়ে গেল কিন্তু কিছু করতে পারল না। ছেলে ইস্কুলে, শ্বাশুড়ি বাড়ি নেই। কেউ বুঝল না, শুনল না। মনোজিৎ তাকে টাঙিয়ে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বলেছিল “শালি আপদ গেছে। ” সেই মনোজিৎ’ই আবার পুলিশের সামনে, লোকজনের সামনে হাহাকার করে কাঁদল।
অনু অনেক লাফাল- ঝাপাল কিন্তু কেউ শুনতে পেল না। এবার রোজ ওই নীলের মা পিয়ালী ছেলেকে নিয়ে আসতে শুরু করল, তার ছেলে মুন্নাকে দেখাশুনো করতে। ছেলেদের বাইরে খেলতে দিয়ে নিজেরা ফূর্তি মারতে লাগল। অনু সব দেখে জ্বলে আবার মরে কিন্তু কিছু করতে পারে না। আজ সুযোগ পেয়েছিল। নীল আর মুন্নাকে নিয়ে পিয়ালী আর মনোজিৎ ডায়মন্ড হারবার যাবে পরদিন এই ঠিক করেছিল। একটু টেনে টিপসি হয়েই ছিল। তার সাধের ভ্রু ছাঁটা কাঁচিটা দিয়ে গোঁপটা কায়দা করার চেষ্টা করছিল। ব্যাস এসে গেল সুযোগ। অনেক চেষ্টা করে, সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে, অনু মোনজিতের কাঁপা হাতটা সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কণ্ঠনালীতে চেপে ধরল…. ব্যাস। কেউ জানল না।
জানলেও বলবে এ সব হতেই পারে না।।