Homeসাহিত্যজাহিদ জগৎ এর একগুচ্ছ আগুন ঝরা কবিতা

জাহিদ জগৎ এর একগুচ্ছ আগুন ঝরা কবিতা

লকডাউনের শহর
জাহিদ জগৎ
আমরা এই শহরের লোক না। গ্রাম থেকে আসছি।
আসার আগে বাপ-মা আর আস্তো একটা গ্রাম
কাঁধে তুইলা দিছে দুনিয়ার স্বপ্ন।
স্বপ্ন আজও দেখে তারা, কিন্তু এই অন্ধ শহরে
আমরা গলি- ঘুপচি হয়ে ঘুরে বেড়াই।
কর্ম বলতে এক ঘণ ধোঁয়া ঘিরে রাখে আমাগো’রে।
বেতন আছে কি নাই করে মাস শেষে ভাড়ার তাগাদা।
তারা জানে না, এই শহর আমার ভাড়ার শহর।
দিনে দুইবার ছুটে যায় বাঁকি’র চাকরি
অথবা আমার মতোন লেখতে আসা ভাগাড়ের দোড়
শেষ হবার আগে যাদের মাস শেষ হয়ে যায়,
তাদের সাথেও তো এই শহরেই পরিচয়।
গভীর রাতে কানাগলি হয়ে ঘরে ফেরে
যেন দেখা না হয় বাড়িঅলা কিংবা বাঁকির দোকানে।
অথচ আজও গ্রামে চাষ আছে আমাদের। চাল-ডাল আছে ঘরে।
বিস্তর বাতাসের প্রলেপে ঢাকা টিনের চাল আছে।
তবু কিছু নগদ টাকার জন্য প্রতিদিন ফোন দেয় আব্বা
জিজ্ঞেস করে, কেমন আছি।
তারপর বলে, রাত হয়েছে অনেক। বাসায় ফিরে খেয়ে নেও জলদি।
আমি চুপচাপ কেটে দেই লাইন, প্রতিদিন।
শুধু বলতে পারি না,
এই লকডাউনের শহরে আমার জন্য কোন খাবার নাই আব্বা।
থামো
জাহিদ জগৎ
শব্দ স্বান্ত্বনা, আমি জানি
কিছুই বদলাবে না। হাতের মাইক আর রাস্তার সমাবেশ
আকাঙ্খার বীজে জল ঢালছে আদ্যিকাল থেকেই
হাতি খাওয়া বেলের মতোই এই পৃথিবী, না কোনদিন উর্বরা ছিলো
আর না কোনদিন ফুটাবে বিস্তর ফুলের বাগান
বোধি-বান হতে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ, তাত্বিকের মনগড়া সমস্ত যুক্তি এবং
বৃষ্টিভেজা শ্রমিক নেতা
সকলেই কেবল জল ঢালছে “মুক্তি” নামক মৃত এক বৃক্ষের গোড়ায়…
যেদিন থেকে মূল্যবান, সেদিন থেকেই বিক্রি
আটকাতে পারে নি কেউ, বাকিরা যা যা বলে গেছে, তা কেবলই দরদাম।
কখনো পশ্চিম, আবার কখনো মরুভূমি থেকে
দর হাকে বাতাসের ফাঁকে, বোকাদেরও চালাক ভাবার সুযোগ দেয়।
যেন মুক্তি, আর কয়েক পৃষ্ঠা মাত্র
অথবা
এই শেষ শ্লোগান, কমরেড রেডি হও
লড়াই? কবে কোথায় হয়েছিলো? কিংবা
ঠিক কোথায় গেলে থেমে যাবে?
যুদ্ধ কোনদিনই করে নি মানুষ, কিংবা অসম্ভব অতীত কেউ গড়তে যায় নি,
প্রত্যেকেই নিজের জীবনের মূল্য বাড়িয়েছে শুধু,
শত বছরের পুরনো এক চুরুটের মতো,
যতো দিন যাবে ততোই দাম বাড়বে কিন্তু খাওয়া যাবে না আর কোনদিন।
শ্বব্দ স্বান্ত্বনা,
আমি জানি, রাস্তায় বেরিকেড বলে কিছু হয় না,
পৃথিবী জুড়ে যাদের রাস্তা তাঁদের আসলে আটকাবে কোথায়?
মগজে?
পোড়া ইটের সমান তোমার দাম, এবং রঙ ও পাখিদের সাথে তোমার দূরত্ব
ঘুচে যাবে বলে যে স্বান্ত্বনা দেয়, সে আগুন
এই আগুন মোটেই বিপ্লব না, ভাটার আগুন
এবং তুমি কেবল কেড়ে নিতে জানো না বলেই সমস্ত হারিয়েছো কয়লার খনিতে
যেমনটা কেড়ে নিয়েছে অন্য কেউ।
কাড়াকাড়ির পৃথিবীতে মুক্ত কোন পাখি নেই, এমনকি আকাশ
অথবা শীতকালে ছুটে আসা পাখিরা যেমন শুধু অতিথি হয়ে যায়;
ভাবতে পারো, এই সব বিদ্যা, বুদ্ধি এবং বিপ্লবের কৌশল?
কি নোংরা হতে পারে মানুষ, যে শুধু চেয়েছে মানুষ নিজের মূল্য বাড়াক,
কিন্তু জানে না,
মূল্যহীন পৃথিবী কাউ’রে রাখতে পারে না মূল্যবান করে।
রিকসা
সাত সকালে জবা ফোন দিয়া কইলো,
সোমবার যে কিস্তির দিন- এইটা মনে আছে তোমার?
আর কইলো,
মাইয়াডা কথা কইতে চায়, ফোনে ট্যাকা নাই। ব্যাক করো।
ফোন ব্যাক করলাম, তুলতুলা কথা। কয়,
আব্বা, রিকসা তো বন্ধ, তুমি অহন খাইবা কি?
বাড়ি আহো, আমার পাতিল ভরা ভাত আছে। মাটির ভাত।
তুমি তাত্তাড়ি আহো আব্বা, নাইলে ভাত জুড়ায়া যাইবো না?
রিকসা-২
জবা, চিন্তা করিস না। রিকসা নিছে তো কি হইছে, আমারে তো আর নেয় নাই।
আগে রিকসায় মানুষ টানতাম, এখন নিজের কাধে মানুষ টানবো।
তবু মাইয়াডা যেন কাইন্দা না উঠে।
গাড়ির কালা জানালা খুলে তাকায় মন্ত্রী।
নোংরা আবর্জনার দল, নিজে বাঁচার মুরোদ নাই তার আবার বাচ্চা!
এইসব ফকির-ফ্যাকরার জন্যই দেশটা আজও সোজা হইয়া দাড়াইতে পারলো না।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments