পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে পরে, পাপের নগরী লাসভেগাস তখন জেগে ওঠে – জাহিদ হাসান
হোটেলের সামনে গাড়ি থেকে নেমেই টের পেলাম লাস ভেগাসে এসেছি। বাতাসে গাঁজার গন্ধ। মনে পড়লো লাস ভেগাসকে পাপের শহর (সিন সিটি) বলা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর লাস ভেগাস। প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। জুয়া খেলার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ক্যাসিনো এবং বিলাসবহুল হোটেলগুলোর অধিকাংশই এখানে। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক বিনোদনের তীর্থ হিসেবেও পরিচিত। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে আসে।
হোটেলে ব্যাগট্যাগ রেখেই বেরিয়ে পড়লাম। ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল বিকেলে। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই, মরুভূমিতে যা হয়, তাপমাত্রা কমে এলো। লাস ভেগাস বুলেভার্ড (লাসভেগাস স্ট্রিপ) ধরে হাটাহাটি করলাম। একেকটা হোটেল যেন একেকটা শহর, ধরে রেখেছে সেই দেশের বৈশিষ্ট্য। কত বড় তা ভিতরে না ঢুকলে বুঝা যায় না। যেমন প্যারিস হোটেল যেন পুরো প্যারিস শহরটাকেই তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া। (ছবিতে আকাশ দেখে খানিকটা টের পাওয়া যাবে)।
হোটেলে ফুটপাতে হাটতে হাটতে কিছু সময়ের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম আমার বাড়ী কোথায়, আমি কে, এখানে কেন এসেছি। বিন্দুমাত্র নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করেও কেমন এক নেশাতুর অবস্থা। তখনই মনে হলো, এই শহরে কেন মধ্যবিত্তরাই বেশি এসে নিঃস্ব হয়ে ফিরে যায়। তারপর টাকা জমিয়ে আবার আসে।
শরীরের ৯০ ভাগ উন্মুক্ত যৌনাবেদনময়ী দুই নারী এসে দুই দিক থেকে দুই হাত ধরে যখন বললেন, আমাদের সাথে একটা ছবি তুলবেন, আমাদের নিরীহ মধ্যবিত্ত মন তাতে সায় দিলো। মদ খাচ্ছি না, জুয়া খেলছি না, এই সামান্য ‘দোষ’টুকু তো করাই যায়। দুই নারী নানাভাবে জড়িয়ে টড়িয়ে ধরে ছবি-ভিডিও করার ‘সুযোগ’ দিয়ে অবশেষে শেষ আব্দারটা করলেন। তাঁদেরকে ডিনার করাতে হবে। যাহোক, আমরা বংগবাজারে ‘মুলামুলি’ করা মানুষ। শেষে কুড়িটা ডলার দিয়ে সরে পড়লাম। আমরা ভাবলাম আমরা জিতেছি। আসলে কে জিতলো সে এক বিরাট পুঁজিবাদী প্রশ্ন।
সে রাতে চাঁদ ছিলো। আমি নিশ্চিত আমরা ছাড়া সেই গোপন সংবাদ সেই রাস্তায় আর কারো কাছে ছিলো না।
(আমাদের পরের গন্তব্য জায়ন ন্যাশনাল পার্ক। আমেরিকার আরেক রাজ্যে।)