নাটোর নিউজ বাগাতিপাড়া : নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুলের বাড়ির একটি কক্ষে লালপুরের গোপালপুর সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে সাড়ে চারঘন্টা আটকে রেখে সাদা কাগজে আট লাখ টাকা পাবে মর্মে লিখে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেছে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে রাতেই প্রথমে লালপুর থানায় ও পরে বাগাতিপাড়া থানায় লিখিত এজাহার জমা দেন। এসময় লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল বাগাতিপাড়া থানা এলাকায় হওয়ায় তার অভিযোগ গ্রহন করেননি। বাগাতিপাড়া থানা অভিযোগ গ্রহনের পর রাতেই গোয়েন্দা পুলিশ অভিযুক্ত রাসেল ও কালামকে আটক করেছে।
গোপালপুর সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তার লিখিত অভিযোগে বলেন, কয়েকদিন থেকে নিয়মিত জনৈক রোকন নিজেকে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুলের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে সংসদ সদস্যের সাথে আমাকে দেখা করতে বলেন। ফলে বৃহস্পতিবার ২৪ জুন দুপুর দেড়টার সময় তিনি বাগাতিপাড়ায় সংসদ সদস্যের বাড়িতে আসেন। এসময় সংসদ সদস্যের নিজ কক্ষে বসে ১০মিনিট কথা বলার পর সংসদ সদস্য উঠে অন্যত্র চলে যান। এই কক্ষে আগে থেকেই সংসদ সদস্যের সাথে জনৈক রোকন, রাসেল ও কালাম বসে ছিল। সংসদ সদস্য চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমিও বের হয়ে আসার চেষ্টা করলে রাসেল বাহির থেকে কক্ষের সিটকিনি আটকে দেয়। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা কালাম টানা সাড়ে চার ঘন্টা আমার পেটে একটি পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে বসে থাকতে বাধ্য করে।
এক পর্যায়ে আমাকে দিয়ে সাদা কাগজে লিখিয়ে নেয় যে, আমি রাসেলের নিকট থেকে আট লাখ টাকা ধার নিয়েছি এবং আজ সন্ধ্যার মধ্যেই তা পরিশোধ করবো। বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৪০মিনিটে রোকন ফোন করে বলেন, লেনদেনটা সেরে ফেলেন, কখন দিবেন বলেন। এ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য রাতেই লালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে ওসি অভিযোগ গ্রহন করেননি। পরে মধ্যরাতেই তিনি নতুন করে এজাহার লিখে নিয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় জমা দেন। এর কিছু সময় পরেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযুক্ত রাসেল (৩৮) ও কালাম (৩৭)কে আটক করেছে। আটক অভিযুক্ত রাসেল লালপুর উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের এবং কালাম গোপালপুর পৌরসভার বিজয়পুর গ্রামের বাসিন্দা। আর মূল অভিযুক্ত রোকনুজ্জমামান রোকন গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বলে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান বলেন, রফিকুল ইসলাম লালপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হলেও যে অভিযোগ করা হয়েছে তার ঘটনাস্থল বাগাতিপাড়ায়। ফলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে বাগাতিপাড়া থানাকেই নিতে হবে, আমার নেয়ার সুযোগ নেই। তাই আমি অভিযোগ গ্রহন করিনি। শুক্রবার (২৫ জুন) সকালে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবী করেন। তবে শুক্রবার দুপুরে নাটোরের গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম দুজনকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা শুক্রবার দুপুরে লালপুরের গোপালপুর সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে সাড়ে চারঘন্টা আটকে রেখে সাদা কাগজে আট লাখ টাকা পাবে মর্মে জোর করে লিখে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা চাওয়ার ঘটনায় বাগাতিপাড়া মডেল থানায় মামলা দায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০দিকে এই প্রতিবেদককে বলেন, শুধুমাত্র তার চরিত্রে কালিমা লেপনের জন্য তার বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ করা হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা তার বাড়ি আসার পর কথা বলে চলে গেছেন। তার বাড়িতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। সব মিথ্যা অভিযোগ। এর আগেও প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে, পরে তা মিথ্যাও প্রমাণ হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
অন্যদিকে সাজানো নাটকে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে ফাঁসাতে গিয়ে ২০০ বস্তা গম চুরি করে প্রকাশ্যে ধরা খেলেন লালপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৫ জুন) বিকেলে লালপুর উপজেলার গোপালপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও এই মামলার বাদী মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বাসা থেকে ২০০ বস্তা সরকারি গম উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি আক্তার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্রলাল চাকমার উপস্থিতিতে উদ্ধারকৃত ২০০ বস্তা গম খাদ্য গুদামে স্থানান্তর করা হয়। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি আক্তার জানান, গোপালপুর সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ২০০ বস্তা সরকারি গম নিজের বাসায় সরিয়ে রেখেছেন এমন খবর পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে গমের বস্তা গুলো পূনরায় গোডাউনে মজুদ করা হয়। পূর্বে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে নিজের বাসায় গম রাখার বিষয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামে বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্রলাল চাকমা।