Homeবিনোদনরাজ্জাক-ববিতা অভিনিত 'অনন্ত প্রেম' সিনেমাটা কি পাওয়া যাবে ?

রাজ্জাক-ববিতা অভিনিত ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমাটা কি পাওয়া যাবে ?

নায়ক রাজ্জাক ও নায়িকা ববিতা অভিনিত ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমাটা আর কি পাওয়া যাবে ??
– জাহিদ হাসান
বাংলাদেশের একটি সিনেমায় এমন একটা দৃশ্য ছিল যা পৃথিবীর আর কোনো সিনেমায় নেই। নায়ক আর নায়িকা পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। নায়কের দাড়ি শেভ করা দরকার, কিন্তু আয়না নেই। অগত্যা নায়িকার চোখের আয়নায় নায়ক দাড়ি কাটছে। নায়িকার মুখের বেশ কাছে নায়ককে ঝুঁকে আসতে হয়েছে। তাঁরা দুজনের নিঃশ্বাসের উত্তাপ অনুভব করছে। একই সিনেমায় পলাতক নায়ক পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। নায়িকা ঘুমন্ত নায়কের শিয়রে বসে গাইছে, ‘আলো তুমি নিভে যাও …যাও… রাত আঁধার হয়ে যাও …যাও …।’
সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে রোমান্টিক এইসব দৃশ্য আর দেখার উপায় নেই। কারন সিনেমাটা হারিয়ে গেছে।
‘অনন্ত প্রেম’ নামের এই সিনেমাটার সাথে আমার বয়ঃসন্ধিকাল আর যৌনজাগরণের স্মৃতি জড়িত। এর গানগুলো আমার মনে চিরকালের প্রেমভাব জাগিয়ে দিয়ে গেছে। পরিণত বয়সে দেখতে আবার কেমন লাগে সেই ভেবে, সিনেমাটা খুঁজছিলাম। কোথাও না পেয়ে এই বিষয়ে ভালো জানাশোনা আছে এমন ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হলাম। কাজল রিপন জানালেন, তাঁর কাছে নেই। তাঁর পরামর্শে নিউইয়র্কের মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহার সাথে যোগাযোগ করলাম। তাঁর কাছেও নেই। পরিশেষে কথা বললাম সিনেমা গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু’র সাথে। তিনি জানালেন, রাজ্জাক বেঁচে থাকতেও নাকি সিনেমাটার কপি খুব খুঁজেছিলেন। পান নি।
১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটার নায়ক রাজ্জাক, নায়িকা ববিতা। এই সিনেমাতেই দেশের সিনেমার ইতিহাসে প্রথম নায়ক নায়িকার চুম্বন দৃশ্য ছিল (যদিও পরে তা বাদেই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়)। এখন সিনেমাটা খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো যদি কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহে থেকে থাকে। সেই ভরসায় এই পোস্ট দিলাম।

অনন্ত প্রেমের গল্প

লিখেছেন: আরিফুল হাসান (বাংলা মুভি ডেটাবেজ থেকে সংগ্রহ করা)

 

একেবারেই নতুন ভিন্ন গল্পকাঠামো নিয়ে নির্মিত হয় ‘অনন্ত প্রেম’। ছবিতে রাজ্জাক এবং তার তিন বন্ধু খলিল এটিএম শামসুজ্জামান ও ব্লাক আনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ববিতাও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। খলিল ববিতাকে পছন্দ করে, কিন্তু ববিতা তাকে পাত্তা দেয় না। সে ক্ষেত্রে খলিলকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে রাজ্জাক, ব্ল্যাক আনোয়ার ও এটিএম শামসুজ্জামান। পরিকল্পনা করতে থাকে কীভাবে ববিতাকে পটানো যায়। সেই মতে নির্জন স্থানে ববিতাকে আক্রমণ করে তিন বন্ধু। আর ববিতার সাহায্যে এগিয়ে আসে খলিল। সাজানো মারামারির কারণে সবাইকে হারিয়ে ববিতার চোখে হিরো হয়ে যায় খলিল।

পরবর্তীতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ববিতাকে নির্জন জায়গায় নিয়ে ইজ্জত লুটতে চায় খলিল। চিৎকার শুনে রাজ্জাক ও বন্ধুরা এগিয়ে যায়। তবে এবার সত্যিকারের মারামারির একপর্যায়ে রাজ্জাকের হাতে খলিল খুন হয়। ববিতাকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাজ্জাক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ঘটনার সঙ্গে ববিতার নাম জড়ালে তার বদনাম হবে ভেবে রাজ্জাক পুলিশের কাছে বলে টাকা নিয়ে ঝগড়ার কারণে বন্ধুকে একাই খুন করেছে।

পরে পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যায় রাজ্জাক। এ দিকে শৈশবে মাতৃহীন ববিতাকে অত্যাচার-অনাচারের অংশ হিসেবে এক লম্পটের সঙ্গে সৎমা বিয়ে দিতে চাইলে বিয়ের আসর থেকে ববিতাও পালিয়ে যায়। রাজ্জাক ও ববিতা দুজনই পালিয়ে যায় দুদিক থেকে, তবে ট্রেনে দেখা হয়ে যায় তাদের। এবার তারা পালিয়ে চলে যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অরণ্যে। যেখানে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়, শুরু হয় এক অনন্ত প্রেম কাহিনির যাত্রা। গভীর পাহাড়ি অরণ্যে ভেসে ওঠে মধুর সেই সুর, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই, তুমি হলে মনের রানি’।

এ দিকে ব্ল্যাক আনোয়ার ও এটিএম শামসুজ্জামান পুলিশের হাত থেকে পালাতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা যায়। ফলে প্রকৃত ঘটনার সাক্ষী দেওয়ার মতো আর কেউ থাকে না। রাজ্জাকের নামে পুলিশের হুলিয়া জারি হয়, হন্য হয়ে পুলিশ খুঁজতে থাকে তাকে। একপর্যায়ে তাদের সন্ধানও পেয়ে যায়, গভীর অরণ্যের মাঝে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাবার সময় একটি ঝর্ণার কাছে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় দুজনের। মৃত্যুর সময় ভালোবাসার নির্দশন স্বরূপ পরস্পরকে চুম্বন করেন তারা। শেষ পর্যন্ত ঝর্ণার তীরে পড়ে থাকে তাদের আলিঙ্গনবদ্ধ প্রাণহীন দেহ। মূলত এটাই কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘অনন্ত প্রেম’-এর মূল কাহিনি৷

ছবির শেষ দৃশ্যের দিকে রাজ্জাক ববিতার একটি চুম্বন দৃশ্য ছিল, যা পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হয়। যার একমাত্র কারণ ছিলেন ববিতা। তিনি কিছুতেই এরকম একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে রাজি হচ্ছিলেন না, তবে রাজ্জাক সাহেব এমনভাবে বুঝিয়েছিলেন তাতে আর ববিতা দৃশ্যটি না করে থাকতে পারেননি। তবে শুটিংয়ের পরই ববিতা আফসোস করতে থাকলেন, রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করেন। ভাবলেন এরকম দৃশ্য দেখলে তো তাকে আর কেউ বিয়ে করবে না। ঠিক তখন রাজ্জাক সাহেব আশ্বস্ত করে ববিতাকে  বললেন, ‘আগে তুমি দৃশ্যটি দেখ, যদি ভালো না লাগে এটি বাদ দিয়ে দেবো।’ অবশ্য পরে ববিতা দৃশ্যটির শিল্পরূপ দেখে বাদ না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু তখন রাজ্জাক সাহেব ববিতার ভবিষ্যতের কথা ভেবে দৃশ্যটি আর রাখেননি। তিনি ভেবেছিলেন এরকম একটি দৃশ্যের জন্যে হয়তো ববিতার ভবিষ্যতের উপর কোন প্রভাব পড়তে পারে। সহশিল্পীর প্রতি এমন দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের রাজ্জাক-ববিতারা।

তবে ছবি মুক্তির আগে এক বিবৃতিতে রাজ্জাক এটাও বলেন, আমার ছবির শেষ দৃশ্যে একটি চুম্বন দৃশ্য ছিল। পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আমার অগণিত ভক্ত, অনেক মা-বোন ব্যক্তিগতভাবে অনেক চিঠি এবং টেলিফোনে আমার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন যে, চুম্বন দৃশ্যটি ছবিতে না থাকলেই কি নয়? আমি পুরো ছবিটি আবার দেখে উপলব্দি করলাম যে চুম্বন দৃশ্য না থাকলে ছবির এতটুকুও সৌন্দর্যহানি হয় না। ঐটুকু ছাড়াই এ ছবি দর্শকদের ভালো লাগবে। তাই ভক্ত এবং মা-বোনদের অনুরোধ রক্ষার্থে আমি চুম্বন দৃশ্য বাদ দিয়ে দিয়েছে।

তূমুল দর্শকপ্রিয় ছবিটির সবকটি গানও পেয়েছিল সমান জনপ্রিয়তা। সংগীত পরিচালক ছিলেন আজাদ রহমান সাহেব, অবশ্য ‘ঐ আকাশ যতদিন থাকবে, এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, আমি যে তোমারই থাকবো’ গানটির পরিচালক ছিলেন জনাব খন্দকার নূরুল আলম সাহেব, গীতিকার ছিলেন কাজী আজিজ আহমেদ সাহেব৷

আজাদ রহমানের সুরে ‘আলো তুমি নিভে নিভে যাও যাও’, ‘ঐ কোর্ট কাচারির এমনই রায়’, ‘তোমারই কাছে আমি বারবার আসবো’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’ গানগুলো এখনো সমান জনপ্রিয়। বিশেষ করে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখায় খুরশীদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’ গানটি সময়ের স্পর্শকে বাঁচিয়ে রেখে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি ক্ল্যাসিক গানে পরিণত হয়েছে। গানটির শুটিং হয়েছিল কাপ্তাইয়ের অসাধারণ সুন্দর সব লোকেশনে!

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments