নাটোরের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল একদিনে আক্রান্ত ১২০ জন
নাটোর নিউজ: নাটোর সমস্ত রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল। আজকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। নাটোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার কাজী মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে নাটোর সদর হাসপাতালে আবু বক্কর নামে একজনসহ দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আবু বক্কর সদর উপজেলার লালমনিপুর গ্রামের মছের উদ্দিনের ছেলে। অপরজন শহরের মল্লিকহাটি ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নেতা মঈদ-উজ্জামান সৌরভ ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে গত (মঙ্গলবার )রাতে মারা যান।
সচেতন সমাজ বলছেন, লকডাউন সহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেও কমছেনা সংক্রমন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা নাটোরে সংক্রমনের রেকর্ড। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৮৮ জনের। সংক্রমনের হার ৪১.৬৬ শতাংশ ।
এনিয়ে জেলায় মোট মৃত্যু ৩৯ জন। আক্রান্ত ২৪৪৬ জন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ৩১ শয্যার করোনা ইউনিটকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরও মেঝেতে রাখতে হচ্ছে রোগীদের। বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৫২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে আজ বুধবার থেকে নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় দ্বিতীয় দফায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন । শহরের গুরুত্বপুর্ন এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
এমনিতেই কদিনের লকডাউনে নিন্ম আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কাজের সন্ধানে বা অপ্রয়োজনে তারা বেরিয়ে আসছে রাস্তা ও হাট বাজারে।
সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান সদর হাসপাতালে একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় নাটোরে করোনা সংক্রমন বাড়ছে। তিনি সকলকে মাস্ক পরিধান করে চলাচলের অনুরোধ করেন।
নাটোরে করোনা সংক্রমণের হার এখন দেশের সব জেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া নাটোর জেলায় গতকাল ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত হয় ৬১জন। পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ৬০.৪০%।
এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ২৪৪৬ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন।
গতকাল আক্রান্তদের ৬১ জনের মধ্যে নাটোর সদরের সর্বাধিক ২১ জন, সিংড়া উপজেলায় ১২ জন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ১২ জন, বাগাতিপাড়ায় ৭ জন, লালপুরে ৫ জন ও বড়াইগ্রামে ৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ জন। এদের মধ্যে নাটোর সদরের ২ জন, সিংড়া এবং বড়াইগ্রামে ১ জন করে। এনিয়ে চলতি মাসেই এই জেলায় মারা গেছেন ১৪ জন।
১৫৬৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নাটোর সদরে ১২৯৩ জন, সিংড়ায় ২২২ জন, বাগাতিপাড়ায় ১৯২ জন, গুরুদাসপুরে ১৫৮ জন, বড়াইগ্রামে ২৬৪ জন, লালপুরে ১৯৭ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৪.৮৩%। তবে অনেকের ধারণা পরীক্ষা কম হওয়ায় এ সংখ্যাটা আপাত কম মনে হলেও নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ালে এর প্রকৃত চিত্র অনেক ভয়াবহ হবে।
অপরদিকে করোনা সংক্রমন রোধে বুধবার থেকে শুরু হওয়া নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় ঘোষিত লকডাউন শেষে নতুন করে আজ থেকে আবারও দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হয়েছে। শক্ত অবস্থান নিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল টিমও কাজ করছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনকে জরিমানা করেছে মোবাইল কোর্ট।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগনকে প্রতিনিয়ত সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষকে মাস্ক পরিধান করে চলাচল করা সহ লকডাউনের বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মাইকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সকলকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে ঘরে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। লকডাউনের বিধি মেনে সকলকে চলাচল করার আহ্বান জানান তিনি।