Homeসাহিত্যদ্বিতীয় বিয়ের পরে...তন্ময় ইমরানের রোমান্টিক রহস্যময় গল্প

দ্বিতীয় বিয়ের পরে…তন্ময় ইমরানের রোমান্টিক রহস্যময় গল্প

দ্বিতীয় বিয়ের পরে…তন্ময় ইমরান
একটা সাদা সালোয়ার ও কামিজ পরে বের হয়েছিল নিঝুম। কনট্রাস্ট সবুজ-লাল কাজ ছিল বুকে। আর ওড়নাটাও ছিল সবুজ লালের ভেতর। টিপ ছিল লাল। কাচের চুড়ি সবুজ। হালকা সাজ। কেননা দ্বিতীয় বিয়েতে কেউ বিশাল সাজ দিয়ে যায় না।
রাশেদকে বিয়ে করার জন্য কাজী অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে সে বৃষ্টিতে ভিজে গেল। কোনওভাবেই কোনও যানবাহন পাচ্ছিল না। ফলে যা হবার তাই, রাস্তার পাশের বেহায়া এবং হায়াসম্পন্ন পুরুষগুলো তার ফুটে ওঠা দেহ সৌষ্ঠবের দিকে তাকাতে ভুলছিল না।
এসব থোড়াই কেয়ার করে নিঝুম। সে যদি বোরকা পরেও বের হত তবুও তাকে কতিপয় পুরুষ দেখতো। এর আগে একটা সময়ে যখন ঢাকা শহরে চাকরি জুটলো- প্রথম কিছুদিন বোরকাও ব্যবহার করেছে নিরাপত্তা পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে। কই বাসে কিংবা ভিড়ে ঠিকই শরীরে হাত পরেছে। বরং স্লিভলেস জামা পরে বের হওয়ার দিনগুলোতে লোকেরা চোখে চেটেছে বটে, গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি। সে যাইহোক নারী-পুরুষ যে কারও দৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাজী অফিসে ঢুকলো নিঝুম। সেখানে রাশেদ আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। তার সাথে কেবল একটা সুটকেস। এটাই রাশেদের সবকিছু।
নিঝুমকে দেখে রাশেদ হাসিমুখে বললো- তোমাকে সুন্দর লাগছে। রাশেদের এ ব্যাপারটা ভালো। এই যে নিঝুমের স্বচ্ছ পোশাক ভেদ করে বৃষ্টির পানি ঢুকেছে, সাথে ঢুকছে কাজী অফিস ও রাস্তার অগণিত লোকের কামুকতা- এর কোনওকিছুই রাশেদকে স্পর্শ করে না। ওর মধ্যে মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য দেখার একটা ব্যাপার রয়েছে। যে কারণে রাশেদকে উদাসীন বলে অফিসে গাল খেতে হয়। সে খুব কেয়ারিং নয়, এবং হতেও চায় না। নিঝুম শুনেছে এ কারণেই রাশেদের আগের সংসার ভেঙেছে।
আগেরজন যখন রাশেদকে ছেড়ে গিয়েছিল- তখন নাকি রাশেদকে বলেছিল তোমার কোনও ভবিষ্যত নেই। কেননা তুমি উদাসীন। রাশেদ তখন কোনও চাকরি-বাকরিও করতো না। বাবার একটা ওষুধের দোকান ছিল- সেটি লাটে তুলেছিল উদাসীন স্বভাবের কারণেই। কাজেই আগের স্ত্রী চলে যাওয়ায় রাশেদ তাকে দোষারোপও করতে পারে না। কিন্তু মাঝে মাঝে সে খুব কষ্ট পায়- কেননা সেই ঘরে তার একটা মেয়ে ছিল। রাশেদের মুখ থেকেই নিঝুম শুনেছে তার আগের স্ত্রী বিয়ে না করলেও, বেশ ভালো আছে। আরেকটি ব্যাপার রাশেদকে কখনও তার আগের স্ত্রীর ব্যাপারে অসম্মান নিয়ে কোনও কথা বলতে শোনেনি নিঝুম। সে আবার অফিসে রাশেদের সিনিয়র; মাত্র চারদিন আগে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশেদকে বিয়ে করবে। বলামাত্রই রাশেদ রাজি হয়ে গেছে।
রাশেদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেনা নিঝুম। জানার প্রয়োজনও নেই। জেনে কী লাভ? রাকিবকে যখন বিয়ে করেছিল তখন তো তাদের পরিচয়ের এক দশক পেরিয়ে গিয়েছিল। সেই রাকিব দুই বছর সংসার করার পর ঝুঁকেছিল অন্য মেয়ের দিকে। যৌথ ফ্ল্যাট কিনেছিল নিঝুম-রাকিব। টাকাও ফিফটি ফিফটি শেয়ার করেছিল। তারপর থেকে গত দেড় বছর দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে তারা আলাদা থাকতে শুরু করলো। রাকিব চাপ দিচ্ছিল বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে। নিঝুম রাজি ছিল না। এ ব্যাপারটা নিয়ে তাদের প্রেমের দশ বছর টানা কথা হয়েছে। তবু রাকিব অ্যাডামেন্ট হয়ে গেল! তারপর ঝুঁকে পড়লো অন্য মেয়েদের দিকে। মেয়ে আসলে একটা নয়, তিনটা বা চারটা।
রাশেদকে বিয়ে করার আগে যে বিষয়গুলো নিঝুমের বিবেচনায় ছিল সেটি খুব সিম্পল- পাঁচ বছর আগে যে দামে ফ্ল্যাট কিনেছে এখন তার ধারে কাছে দামেও ফ্ল্যাট সে পাবে না। কাজেই যে করেই হোক রাকিবকে ফ্ল্যাট থেকে ভাগাতে হবে তার প্রাপ্য টাকা দিয়ে, সেটা আগের দামের অর্ধেক। রাকিব সোজাসুজি যেতে চাবে না- আবার জোর করাও নিঝুমের শক্তিতে কুলাবে না। কাজেই স্ট্রেট বিয়ে করে বর নিয়ে বাসায় উঠলে রাকিব একটা আপসে যাবে হয়তো। হয়তো অর্ধেক ফ্লাটের মালিকানার জন্য বেশি টাকা দাবি করতে পারে, তখন কাবিননামার প্রসঙ্গ টেনে কিছু একটা বুঝ দেওয়া যাবে। যদিও নিঝুম জানেনা, আরেকটা বিয়ে করে ফেললে কাবিননামার টাকা পাওয়া যাবে কিনা! তবে কোনও অবস্থাতেই ফ্ল্যাট ছাড়া যাবে না।
কেননা, ঢাকায় যে বাড়িভাড়া- তাতে সে যদি প্রাইভেট জব থেকে কোনও কারণে ছিটকে পড়ে, তাহলে হাপিস হয়ে যাবে। বরং একটা ফ্ল্যাট হাতে থাকলে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত টিকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিয়ে করার পর দুজন রিকশায় ভিজতে ভিজতে বাড়ি এলো। ফ্ল্যাটের একগোছা চাবি নিঝুমের কাছেই থাকে। ঢুকেই দেখলো অদ্ভুত এক কাণ্ড। তার প্রথম স্বামী রাকিব বিয়ে করে আগেই এনেছে এক ভদ্রমহিলাকে, এর সাথে আবার একটা বাচ্চাও আছে। এটা অবশ্যই একটা চমক। তবে পরের চমকটার কাছে আগের চমকটা কিছুই নয়। রাকিব যাকে বিয়ে করে এনেছে সে যে রাশেদেরই আগের স্ত্রী এটা কি কেউ গল্প-উপন্যাসেও ভাববে! ঘরের বাকি তিনজন থমথমে মুখ নিয়ে আজন্ম উদাসীন রাশেদ ও তার মেয়ের আহ্লাদ শুনতে শুনতে তখন ভাবে এ গল্পের শেষ কোথায়!
(এ সিচুয়েশনের সমাপ্তি কী হতে পারে, সেটি নিয়ে পাঠকের কাছেও মন্তব্য আশা করছি।)
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments