যৌন নির্যাতিত শবনমের পর এবার পরীমনি ! ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি নাকি ন্যায় বিচার ??
এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের ইপ্রোফাইল যৌন নির্যাতিত নারী হচ্ছেন চিত্রনায়ীকা শবনম। সময়টা তখন ছিলো পাকিস্তান ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। গনতন্ত্রহীন একনায়ক জেনারেলদের শাসন ব্যাবস্থায় বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদে বেড়িয়েছে। সেই ঘটনার এতো বছর পর আবারো এই স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটেগেলো
চিত্রনায়ীকা পরীমনির উপড় যৌন নির্যাতন। ন্যায় বিচার পাবে কি পরিমনি ??? নাকি ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি ঘটবে আবারো ?? তার আগে চলুন জেনে আসি ইতিহাসটা………
পরীমনি সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল যৌন নির্যাতিত নারীর উদাহরণ। তবে উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে হাইপ্রোফাইল রেইপ কেস ভিকটিম ছিলেন বাংলাদেশি বাঙালি ঝর্ণা বসাক ওরফে শবনম।
উপমহাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ধরা হয় ঝরনা বসাক বা শবনমকে।
১৯৬২ সালে চলচ্চিত্র জীবনের শুরু এবং সারাজীবনে প্রায় ১৭০ টির মত সিনেমায় অভিনয় করেছেন শবনম।
মোট ১৩ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার শবনমের রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি।
৬০ এবং ৭০ এর দশকে নাদিম-শবনম এবং রহমান-শবনম জুটি মানেই সুপার ডুপার হিট সিনেমা ছিল।
১৯৭৮ সালের ১৩ই মের রাতে তৎকালীন পাঞ্জাবের মুখ্য সচিব এফকে বানদিয়ালের ভাগ্নে ফারুক বানদিয়াল এবং তার চার বন্ধু অস্ত্রশস্ত্রসহ শবনমের নিজ বাড়িতে হামলা চালায়। স্বামী বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষ এবং একমাত্র সন্তানকে বেঁধে রেখে তাদের সামনেই এই ৫ নরকের কীট শবনমকে সারারাত ধরে ধর্ষণ করে।
এরা সবাই ছিল উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক পরিবার থেকে আগত। ঘটনার পরে শবনম এবং তার পরিবারের উপরে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে মামলা-মোকদ্দমা না করা হয়।
কিন্তু সেই সময় পাকিস্তানের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই শবনমের পাশে এসে দাঁড়ায় ফলে একনায়ক জেনারেল জিয়াউল হক সরকার বাধ্য হয় বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল গঠন করতে। বিচারের রায়ে ৫ আসামিকেই ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মূল আসামীর মামা যিনি পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। শবনম এবং তার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন এবং তাদেরকে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেওয়া হয়।
শবনমের নিজের আইনজীবী এসএম জাফর ফাঁসির রায় হওয়ার পরে জেনারেল জিয়াউল হককে চিঠি লেখেন এই মর্মে যেআসামিরা গত ভুট্টো সরকারের আমলে যে সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে এবং উশৃংখল সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে পথভ্রষ্ট হয়ে এই কাজ ঘটিয়েছে এবং এতে তাদের নিজেদের খুব একটা দোষ দেয়া যায় না।
একনায়ক জেনারেল জিয়াউল হক পরবর্তীতে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দেন এবং এই মামলাকে ধর্ষণ মামলা থেকে থেকে বাদ দিয়ে একটা সাধারন ডাকাতির মামলা হিসাবে নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়।
সমাজের নানা স্তরে থেকে চাপ আসতে থাকায় পরবর্তীকালে শবনম এবং তার স্বামী আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফের রায় মেনে নিতে সম্মত হন।
মূল আসামি ফারুক বান্ডিয়াল পরবর্তীতে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তার বন্ধুরা সবাই ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে ফারুক বান্ডিয়াল ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই তে যোগদান করে। কিন্তু নতুন করে শবনম ধর্ষণ মামলার ঘটনাটি মিডিয়ায় চলে আসলে ইমরান খান তাকে দল থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন।
আমরা চাই স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি ঘটবে না, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না, এই প্রত্যাশা…….
শ্রীমতী মেরিন সাহেব