Homeবিবিধজারুলের সাথে দেখা আঁচলকোটে - খন্দকার মাহবুবুর রহমান

জারুলের সাথে দেখা আঁচলকোটে – খন্দকার মাহবুবুর রহমান

জারুলের সাথে দেখা আঁচলকোটে – খন্দকার মাহবুবুর রহমান

নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের, আঁচলকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের এক প্রান্তে, গ্রামীণ সড়কের পাশে দেখা হয় জারুলের সাথে। স্থানীয় ও পথচারীরা কেউ জানেনা এই ফুলটির নাম কি ? তবে স্থানীয়রা বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রায় একযুগ আগে রোপণ করেছিলেন এই ফুলের গাছ।

 

এছাড়াও নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, জজকোট মসজিদের পাশে, উত্তরা গণভবনের নাটোর রাজবাড়ি অনেক জায়গাতেই চোখে পড়ে। মনমুগ্ধকর এই ফুল যে কোন মানুষকেই আকৃষ্ট করে।জারুল ফুল অতৃপ্ত মনকে কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য হলেও স্নিগ্ধতা আনবে মনেপ্রাণে।

 

জারুল ফুলের গাছ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের বোটানিক বিভাগের, প্রভাষক মো. শরিফুল ইসলাম‘এর সঙ্গে তিনি বিস্তারিতভাবে জানালেন, প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখতে জারুল ফুলের কোনো জুড়ি নেই।

 

জারুল ফুল পাপড়ির নমনীয় কোমলতায়, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে। এই পাতাঝরা বৃক্ষ শীতকালে পত্রশূন্য থাকে। বসন্তে গাঢ় নতুন সবুজ পাতা গজায়। জারুল ফুলের গাছ নাটোরের বিভিন্ন স্থানে অতীতে দেখা মিললেও বর্তমানে খুব কমই চোখে পড়ে।

 

গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরত পর্যন্ত তা দেখা যায়।ফুল শেষে গাছে বীজ হয়, বীজ দেখতে গোলাকার ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়। সৌন্দর্য্যময়ী জারুল একটি ঔষধি গুনসমৃদ্ধ গাছ আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় রয়েছে বিরল অবদান।

 

ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ জারুল।আদি নিবাস শ্রীলংকায়।ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে।নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠে, তবে শুকনো এলাকায় মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।

 

মাটির আনুকূল্যে বর্তমানে চট্টগ্রামের বনাঞ্চলের নিন্ম এলাকায় এবং সোনারগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহা-সড়কে ধারে জারুল গাছ ব্যাপক হারে দেখা যায়।যদিও এর রং বেগুনি, তবুও অনেক সময় এর রং সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়।

এর বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। নামটির প্রথমাংশ এসেছে সুইডেনের অন্যতম তরু অনুরাগী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে। স্পেসিওজা ল্যাটিন শব্দ, অর্থ সুন্দর।ফুলটির ইংরেজি নাম Giant Crape-myrtle এবং Lythraceae পরিবারের।এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia Speciosa।

জারুলের Lagerstroemia indica নামে ছোট একটি প্রজাতি রয়েছে, যা বৃহত্তর সিলেট ও কিশোরগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।জারুলের রং ও রূপ নয়নাভিরাম, ফুলে পাপড়ি ছয়টি, ফুলের মাঝখানে হলুদ রঙের পরাগ রয়েছে। গাছ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়।

 

পাতা ও বাকলে ট্যানিন আছে।গাছের পাতা সবুজ, পুরু ও বেশ বড়। গাছের শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড শক্ত, শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে দণ্ড-বোঁটায় অসংখ্য ফুল ফোটে। বোঁটার নীচ থেকে প্রথম ফুল ফোটা শুরু হয়ে বোঁটার সামনের দিকে ধীরে ধীরে ফুল ফোটে বলে জানান তিনি।

 

নাটোর সদর হাসপাতালে হারবাল চিকিৎসক উম্মে কুলসুম জানান, জারুল একটি ঔষধি গাছ এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতা মানব কল্যাণে জারুল উপকার সাধন করে বলে জানান তিনি।

 

এক দিকে সৌন্দর্য আরেক দিকে ঔষধি গুণ আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় রাখছেন অবদান। এমন একটি গাছ নাটোরের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সড়ক-মহাসড়কের পাশে, এনজিও, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বেশি বেশি করে, রোপনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন নাটোরের বৃক্ষ প্রেমিকেরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments