Homeসাহিত্যসোনাই নদীর সাঁকো - রাজু বিশ্বাসের অণুগল্প

সোনাই নদীর সাঁকো – রাজু বিশ্বাসের অণুগল্প

সোনাই নদীর সাঁকো
রাজু বিশ্বাসের অণুগল্প
ঝমঝম বর্ষা। ঘাসিরামের মা বারান্দায় বসে বসে ভাঙা কুলোয় খুদ ঝারছিল। কদিন ধরে এই খুদ-ভাতই জুটছে। খেজুর পাতার চ্যাটাই বুনে বিক্রি করে কোনও রকমে ঘাসিরামের সংসার চলে। সদরের ডকে সপ্তায় দু’দিন হাট বসে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে হাট ভেসে গেছে। মানুষজন আসতে পারছে না। হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়েই কেউ কেউ টুকটাক শাক সবজি বিক্রিবাট্টা করছে। ঘাসিরামের সংসারে মা ছাড়া দুই মেয়ে আর বউ নয়নতারা।
পাঁচটা মানুষের পেট ভরানো সহজ কথা নয়। হাঁসেদের খাওয়ানোর জন্যই কমাস আগে ঘাসিরাম বাজার থেকে কম দামে অনেকটা খুদ কিনেছিল। এখন অসময়ে সেটাই কাজে লাগছে, নইলে কি যে হত … ভাবতে পারে না ঘাসিরাম। তাছাড়া রোদ্দুর না পেয়ে আগে বোনা বেশ কতকগুলো চ্যাটাই-য়ে সাদা সাদা ‘ছ্যাতা’ পড়ে গেছে। ওগুলো আর বাজারে বিকবে না; তাছাড়া এখন প্ল্যাস্টিকের মাদুরেই ছেয়ে গেছে বাজার। বেশি টাকা দিয়ে চ্যাটাই শীতলপাটি এই সব না কিনে মানুষ এখন কম দামে ওই সব ব্যাবহার করছে।
ঘাসিরামের মা খুদগুলো ঝেরে একটা মাটির কলসিতে তুলে রাখছিল, এমন সময় ঘাসিরামের ছোট মেয়ে নীলা একটা দুধসাদা হাঁস বুকের মধ্যে চেপে ধরে নিয়ে এসে বলল, ও থাম্মা দেখো না জিপ্পি আমার সঙ্গে খেলছে না, শুধু পালিয়ে খানায় নেমে যাচ্ছে, সাঁতার কাটছে। বল তো থাম্মা আমি অত জলে ওর সঙ্গে সাঁতার কাটতে পারি! তুমি একটু জিপ্পিকে বল না আমার সঙ্গে খেলতে।
নীলার ঠাকুমা ফোকলা দাঁত বার করে নাতনির থুতনিতে চুমু দিয়ে বলে, ওরে আমার সোনা দিদি রে, হাঁস তো জলে নামবেই, ও কি মানুষের কথা বোঝে ?
-কেন বুঝবে না, জিপ্পি তো আমার সঙ্গে খেলা করে।
ঠাকুমা অবুঝ নাতনির বুকের মধ্যে চেপে রাখা হাঁসটাকে ধমক দিয়ে বলে, এই জিপি, একদম দুষ্টুমি করবিনে, আমার সোনা দিদির সঙ্গে সবসময় খেলা করবি… কেমন?
এ কথা শুনেই যেন হাঁসটা নীলার বুক থেকে হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করে প্যাঁক প্যাঁক ডাক ছাড়তে ছাড়তে ঝাঁপিয়ে পড়লো উঠোনে জমে ওঠা জলের উপর।
কলসির খুদ শেষ। কিন্তু বৃষ্টি এখনো শেষ হয়নি। নয়নতারা রাতে ভাত বাড়তে গিয়ে মুখে আঁচল চাপা দিল। নীলা আর শিলা লম্ফের আলোয় মায়ের জলে ভরা চোখ দেখতে না পেলেও ঘাসিরামের নজর এড়াল না। নয়নতারা চাষিঘরের মেয়ে। বাপের বাড়িতে ধান চালের অভাব নেই, দশবারো বিঘে জমিতে ধান হয়। কিন্তু ঘাসিরাম জানে শত অভাবেও সে বাপের বাড়িতে গিয়ে হাত পাতবে না।
পরদিন আকাশ একটু ধরণ দিল। ঘাসিরাম খুব ভোরে উঠে জিপ্পিকে ডোব থেকে বার করে বাড়ির উঠোনে জমে থাকা গোড়ালি সমান জল ভেঙে বাজারের দিকে রওয়ানা দিল। জিপ্পি একটানা ডেকে যাচ্ছিল প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক…, জিপ্পির সেই আর্তস্বর ঘুমন্ত নীলার কানে পৌঁছানোর আগেই ঘাসিরাম পেরিয়ে গেল সোনাই নদীর সাঁকো।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments