উইয়ার্ড স্টোরিজ-০১
তন্ময় ইমরান
গ্যালাকটিক ইতিহাসে আড়াইশ বছরের মধ্যে প্রথমবার কিরো হতে যাচ্ছে সেই ব্যক্তি যার মৃত্যুদণ্ড হলো। সুপ্রিম সুপার কম্পিউটার এবং নারী ও পুরুষ প্রধান বিচারকের তিনজনের জুরি বোর্ড তাকে এই দণ্ডে দণ্ডিত করে বললো- রবোট ও মানুষের ইতিহাসে যে ঘৃণ্যতম অধ্যায়টি কিরো শুরু করেছে- আশা করা যাচ্ছে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
কিরো একজন রবোচিপ প্রোগ্রামার। মূলত সে কাজ করতো একটি সেক্স রবোট কোম্পানির প্রধান প্রোগ্রামার হিসেবে। তার কোম্পানি গত ৫০ বছরে মানুষকে সঙ্গী হিসেবে এমন সব সেক্স রবোট উপহার দিয়েছে- যেগুলোর মানবিক আবেগ ঠিক মানুষেরই কাছাকাছি। গত বিশ বছরে কিরো রবোটের যৌনকর্মের সময় ঘাম নিঃসরণ, হাঁপিয়ে যাওয়া, শিৎকার যুক্ত করে সেক্সটয় হিসেবে রবোটকে মানুষের চেয়েও বেশি পারফেক্ট করে তুলেছে।
যৌনতায় মানবিক গুণাবলীর চরম উৎকর্ষতা রবোটের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়ায় তার কোম্পানি দেখেছে অপরিমিত মুনাফা। কিন্তু তারপরও তাকে মৃত্যদণ্ড পেতে হলো।
কেননা শেষ ব্যাচে কিরো এক্সপেরিমেন্ট করতে বেশ কিছু রবোটে বসিয়েছিল ভিন্ন বুদ্ধিমত্তার চিপ। মূলত নারীদের যৌনতার স্বাদ মেটাতে তৈরি ওই পুরুষ রোবোটগুলোর কোনো কোনোটার প্রোগ্রামিং ছিল সমকামিতার।
ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে- নারীরা বাড়িতে পুরুষ রোবোট নিয়ে গেল ঠিকই, নিজেদের চাহিদাও মেটাতে পারলো ঐ রোবট থেকে। কিন্তু রোবোট তো তৃপ্ত হলো না। ফলে একটা সময় পর ‘বাগ’ বা ত্রুটি দেখা দিল। দু চারটা রোবোট সুযোগ পেয়ে রাস্তায় বের হয়ে অতি উত্তেজনার বসে দুই চারজন পুরুষের পাছায় নিজেদের সিন্থেটিক লিঙ্গ ঢোকানোর চেষ্টা করলো।
গ্যালাক্টিক চেয়ারপারসনের স্ত্রীও একটা রোবট কিনেছিলেন, কেননা চেয়ারপারসন সবসময় ব্যস্ত থাকেন। তাছাড়া রোবোটের সাথে সেক্স করাটা সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী অনুমিত। সমস্যা বাঁধলো- গ্যালাটিক চেয়ারম্যানের স্ত্রীর রোবোট যখন চেয়ারম্যানকেই গোসলরত অবস্থায় নগ্ন পেয়ে তার সমকামিতার স্বাদ মেটালো তখন।
এটাকে জুরিরা ধরলেন- উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গ্যালাক্টিক চেয়ারম্যানের উপর মনতাস্ত্বিক হামলা, যা অবশ্যই মৃত্যদণ্ডের উপযোগী। আর কিরো যেহেতু এর পেছনে, কাজেই তাকে দেওয়া হলো- শাস্তি।
কিরোর মৃত্যুদণ্ডের পর সমকমী রোবোটগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। কিন্তু মাত্র চল্লিশ বছর পর আরেক রবোচিপ প্রোগ্রামার এমন এক ভাইরাস রবো জগতে ছড়ায়- যাতে সমস্ত রোবোটই সমকামী হয়ে পড়ে এবং রোবটদের জগতে যৌনতার স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে মানুষ সমকামীরা যোগ দিয়ে গ্যালাক্সির ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটা গ্রহে একান্ত নিজেরা থাকার অধিকার পায়।
সেখানে বসতি গড়ে ওঠার গল্পটা আরেকদিন বলা যাবে। তবে বলে রাখা ভালো- ধর্ম-বর্ণ-জাতীয়তা, মতবাদ ও সংস্কৃতি বাদে যৌনতার স্বাধীনতা নিয়েও যে একাত্ম হয়ে গ্রহবাদ তৈরী হতে পারে সেটির প্রমাণ ছিল ওই আন্দোলন।