গুরুদাসপুর, নাটোর নিউজ:
নাটোরের গুরুদাসপুরের নারায়নপুর-চিকুরমোড়ে চারশতক জমির ওপর সরকার প্রদত্ত টিনশেড ঘরে বসবাস করেন এতিম অসহায় মেয়ে কাজলী খাতুন (৩০)। তার মা-বাবা মারা গেছেন কিশোরী কালেই। পরে কাজলীর মামা ও মামাতো ভাইরা তার বিয়েও দেন। এখন দিনমজুর স্বামী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে কোনোমতে দিনকাটে কাজলীর। কিন্তু হঠাৎ তার বাড়ির জমিটুকু জবরদখলের জন্য নানাভাবে অত্যাচার করে আসছেন তারই আপন মামাতো ভাইরা। সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে কাজলী খাতুন বিভিন্ন সময় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ ও মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার নথি ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ মার্চ সকালে অভিযুক্ত আলম শাহ ও তার ভাইরা কাজলীর বাড়িঘর ভাংচুরের সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাইলে ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চান কাজলী। ঘটনার দিনই গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন কাজলী। এরপর থেকে ঘরের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে তাকে পরিবারসহ অবরুদ্ধ করে রেখেছে আলম বাহিনী।
গত ৩১ মার্চ রাতে কাজলীর একমাত্র ঘরটিতে আগুন দেওয়া, ঘরের আসবাবপত্রসহ রান্নাঘর, খড়ির ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে বাড়ির সব গাছপালা কেটে নিয়ে যায় আলম বাহিনী। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১ এপ্রিল গুরুদাসপুর আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন স্বামী জাহিদুল এবং ৬ এপ্রিল ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন কাজলী। এমনকি গত ৩০ এপ্রিল কাজলীর ভোগদখলকৃত মাঠের ১১ শতাংশ জমির কাঁচাধান কেটে নষ্ট করে অভিযুক্তরা। গুরুদাসপুর থানার এসআই সেলিম ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে নাটোর ডিবি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ভুক্তভোগী কাজলী বলেন, জন্মের পর থেকেই ওই সম্পত্তিতে বসবাস করছি। মায়ের সম্পত্তির দলিলে দাগ ভুল দেখে ৩০ বছর পর এসে আমার ভোগদখলকৃত বসতবাড়ী জবরদখলের উদ্দেশ্যে গত এক বছর ধরে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার করে আসছেন মামাতো ভাইয়েরা। এসব ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ন্যায় বিচার পাইনি। উল্টো প্রাণনাশের হুমকি খেয়ে দিনকাটাতে হচ্ছে।
অভিযোগের কথা স্বীকার করে আলম শাহ বলেন, আমার পিতার নামে রেকর্ডকৃত সম্পত্তিতে কাজলী বসতবাড়ি করে আছে। ওয়ারিশসূত্রে সেই চারশতক জমির মালিক আমি। তাই জমির ভোগদখলও আমি করব। গ্রাম্য প্রধানদের কথায় কাজলীকে আমার জায়গায় থাকতে দেওয়া হয়। তারপরেও কাজলী আমরা বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করেছে।
দলিল ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, ২০০৯ সালে মেয়ে কাজলীর নামে জসোদা তার দখলীয় সম্পত্তির ১৫৬ খতিয়ানের ৬৬৮নং দাগের ৪ শতক জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দেন। ২০১৩ সালে মা মারা গেলে ২০১৯ সালে সরকারের দেওয়া ঘর নির্মান করে ওই ভিটেমাটিতেই বসবাস করে আসছিলেন কাজলী। এতকিছুর পরও তার মামাতো ভাইরা সম্পত্তি জবরদখলের পায়তারা করছেন। এছাড়া গাছের লিচু লুট করে নেওয়ার ঘটনায় আলম শাহর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন প্রতিবেশি আনিছুর রহমান।
বাদীপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. আতিকুল হক বলেন, ১৯৯৬ সালে ওই চারশতক জমি আক্কাছের ভাই আহাদ আলী তার বোন জসোদাকে বন্টনমুলে হস্তান্তর করেন। কিন্তু জমির দাগ ১৫৬ খতিয়ানের ৬৬৮ দাগ হবে। ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দাগটি সংশোধনের জন্য গুরুদাসপুর সহকারী জজ আদালতে কাজলী মামলা দায়ের করেছেন।
ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে কোর্টে মামলা চলছে। এটা ফৌজদারী মামলা। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।