ভয়
জাহিদ জগৎ
ভয়, চায়ের কাপ থেকে গড়িয়ে পড়া নুন
ভয়, ধমকের সুর থেকে ছিটকে পড়া গান।
আমাদের দিন কেবল অনিশ্চিত প্রতিযোগিতা। আমরা আমাদের সবচে কাছের বন্ধুকে শত্রু ভাবতে ভাবতে বড় হয়েছি। প্রতিনিয়ত হেরে যাবার যন্ত্রনা ছিলো মায়ের আঁচল।
দুজন জিতেছে তো আমরা একশো হেরে গেছি। হেরে গেছে মায়ের ঘাম, অক্ষম পিতার স্বপ্ন। আমরা হেরে গেছি আমাদের আকাঙ্ক্ষার কাছে। তারপর ভয়, ভয় পাপের, ভয় সাপের, ভয় সত্যের, ভয় মৃত্যুর।
উদ্ভ্রান্ত এক দেশ যাকে প্রেম বলে অবলিলায় কেড়ে নিচ্ছে জীবন। আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠছে সেইসব আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে, প্রতিনিয়ত এক ভয়ের কারাগারে। ক্ষুধার ভয়ে চুপচাপ মৃত্যুকে ভালোবেসে
প্রতিনিয়ত ঘরমুখো শামুক
ভুলে গেছে জীবনের খোল… ঢোল নাল থেকে উঠে যাচ্ছে তাল।
কেবল বন্দুক, বিসিএস, চেতনা, দ্যোতনা..
চুপচাপ মরে যাও, নির্ভয়ে মরে যাও
একা এক অন্ধকার গৃহে
আর নয়তো এস আই থেকে শুরু করে, এস পি, ডিসি
র্যাব, ডিবি, কাউন্টার টেরোটিস্ট
গুম, খুন, সাদা পোষাক, কালো পোষাক পড়ে
কেবল মাত্র ভয়েরা ছুটে আসে গভীর অন্ধকারে…
আলোতে আসে ক্ষমতা।
ক্ষমতা এক অদৃশ্য হুংকার, কে কাকে দেয় কেউ জানে না।
কেবল রাতের অন্ধকারে শোনা যায়, ভোট দেওয়া হয়ে গেছে
বাকি আছে মৃত্যুটা…
মৃত্যু এক ঊদের মতো, যার কোন গুদ নেই।
শমন জারি আছে ঘাড়ে ঘাড়ে, মাথা মুন্ডুহীন
মাটি খুড়ে খুড়ে আমরা কেবল শেকড়ে খুজি আলু কিংবা কবরের ঠিকানা
আমরা চালে ডালে লিখে রাখি আমাদের পরাজয়
মাসের অর্ধেক সময় বাড়িওলার ভয়ে মধ্যরাতে বাড়ি ফেরা এক জাহাজসম তুলে নিতে চাই
বউ বাচ্চার ভয়, মা-বাপের ভয়, বর্তমানের ভয়, ভবিষ্যতের ভয়
ভয়, কাগজের পাতা থেকে উঠে আসে এক ক্ষুধা পীড়িত কবির চোখে
যার আজ এবং কাল দুটোই মরে পড়ে আছে ময়লার স্তুপে
কাকহীন একটা শহর কতটা ভীতিকর হতে পারে তা শুধু সেই জানে,
নির্ভয়ে লেখা হয় না কিছুই,
তিলে তিলে মরে যাওয়া যে আত্মহত্যা হতে পারে, লেখা হয় নাই সে ডায়েরি।
ভয়,
এক অকাল বৃদ্ধের চোখের ছানি
যে প্রতিনিয়ত ভাবে, অপারেশন করালেই আবার দেখতে পাবে
ভয়,
সন্তান হারানো পিতার পীঠের কুজ
যেন কেটে ফেললেই সে আবার সোজা হয়ে দাঁড়াবে…
ভয়, আমাদের একমাত্র দেশ
জন্মের সাথে সাথে যা, মা আমাদের উপহার দিয়েছিলো…