.সিঁন্দুরের ঐতিহ্য্ – ভাস্কর বাগচী
বিবাহিত নারীদের সিঁথিতে সিঁন্দুর পড়া আনুমানিক ৫,০০০ বছর প্রাচীন ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। প্রাচীন রামায়ণে সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদী সিঁথিতে সিঁন্দুর ব্যাবহারের স্পস্ট প্রমাণ আছে। রামায়ণে শ্রীরাম যখন সীতা কে বিবাহ করেন তখন তিনি সীতার সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, একই প্রমাণ আছে হরিবংশ পুরাণে যখন শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীদেবী কে বিবাহ করেন তখন তিনিও রুক্মিনীদেবী সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, এই পরম্পরাই এখনও অবধি বিবাহতে চলে আসছে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রী কে সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করিয়ে স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করে। এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক এটা স্বীকার করে থাকেন প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেও নারীরা সিঁন্দুর ব্যবহার করতো।
সিঁন্দুরের গুরুত্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাখা আছে “ললিতা সহস্রনামে”। এটা ব্রহ্মান্ডপুরাণের অংশ বিশেষ, দেবী ললিতা যিনি দূর্গা বা শক্তির অপর নাম তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ললিতাদেবীর সিঁথির সিঁন্দুর কে শ্রীলক্ষ্মীর প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ্যাৎ একজন বিবাহিত নারীকে এই সিঁন্দুরই তাকে শ্রীলক্ষ্মীর স্বরূপ হিসাবে সমাজের সামনে তুলে ধরে। সংস্কারে নারীকে লক্ষী হিসাবে গণ্য হয় এবং বিবাহিত নারী কে শ্রী+লক্ষ্মী =শ্রীলক্ষ্মী হিসাবে গণ্য করা হয় কারণ একজন বিবাহিত নারী সংসারের “শ্রী” এর কারক, “শ্রী” বিনা সেই সংসার পূর্ণতা পাই না।
আদি শঙ্করাচার্য তার “সৌন্দর্যলহরী” গ্রন্থে সিঁন্দুর কে শক্তির স্বরূপ অর্থ্যাৎ দূর্গার প্রতীক অর্থ্যাৎ যিনি দূর্গতি হারিণী তার প্রতীক ও মঙ্গলরুপী সূর্য হিসাবে ব্যাখা দিয়েছেন। সিঁথিতে সিঁন্দুর ও কপালের সিঁন্দুরের টীপ শ্রী চক্রের স্বরূপ।
.
সিঁন্দুরের সামাজিক গুরুত্ব#
.
# বিবাহিত নারীদের সিঁন্দুর সমাজে ২টি প্রধান গুরুত্বের নির্দেশ দেয়।
.
(১) সিঁথিতে সিঁন্দুর নির্দেশ করে সেই নারীটি বিবাহিত, সে একজনের স্ত্রী। ফলে সমাজের সমস্থ নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে তাকে খুব সহজে আলাদ ভাবে চেনা যাবে এবং অন্য একজন সংস্কারী পুরুষ তার প্রতি পরস্ত্রীর মর্যাদা ও মনোভাব দেখাই।
.
(২) সিঁন্দুরের কমলা-লালবর্ণ নির্দেশ করে সেই নারীটি একটি সংসারে মঙ্গলকারক ও পতিব্রতার স্বরূপ। সংসারের কল্যাণ সাধনে সেই নারী সর্বদা তৎপর।
অর্থ্যাৎ সিঁন্দুর একটি গুণাবলী নির্দেশক প্রতীক, যা একজন বিবাহিত হ নারীর মাহাত্ম্য কে সমাজের সামনে তুলে ধরে। এখন অনেকই নারী আছে যারা সিঁন্দুর পড়ে না, সম্ভবত তাদের বোধহয় এইসব মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী গুণগুলো থাকে না বা পালনে অক্ষম বা অনাগ্রহী। কারণ লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মীর মধ্যে এই একটা পার্থক্য এই সিঁন্দুর।