যারা ঈদে বাড়ি যাওয়া গরিবদেরকে কটাক্ষ করছেন তারা কারা? – আতোয়ার হোসেন
আপনারা কি জানেন যে, এই বাড়িতে যেতে চাওয়া অধিকাংশ কামলারা বছরের দুইটা ঈদ ছাড়া টানা তিন দিনের ছুটি আর কোনো কারণেই পায় না?
অনেকের নিয়োগপত্র থাকলেও শ্রম আইন মোতাবেক কোনো সুবিধা তারা পায় না। ছুটিসহ আরো নানান পাওনার হিসাব তাদের কাছে রূপকথার মতো।
অধিকাংশরা পুরো পরিবার গ্রামে রেখে সারাবছর যাচ্ছেতাই টিকে থাকার চেষ্টা করে কর্মক্ষেত্র নামক গরাদে।
কারো কারো বউ-বাচ্চা কাছে থাকে বটে। তাদের পরিবার কেবল ঐ বউ-বাচ্চাই নয়। তাদের পিতামাতাসহ আরো কেউ কেউ আছে। তাদের কেউ মরে গেলে এবং কেবল ঈদ এলেই মুখ দেখার সুযোগ ঘটে জীবনে।
যারা ছুটি নিয়ে পাতায়া কিংবা কক্সবাজার যেতে পারে তারা (আপনারা) কেমন করে বুঝবেন যে, গ্রামের শ্বাস নিতে যারা যায় তারা ঈদ করতে নয় বরং সহজ একটা শান্তির আশায় যায়। এই শান্তিটা তারা বিপুল বিনিময়ে কেনার চেষ্টা করে। কখনো তা খোদ প্রাণ দিয়ে।
আপনারা সারা বছর তাদের কেবল এই ছুটি পাওয়া-না-পাওয়ার কেচ্চাটা একটু জানার চেষ্টা করে দেখেন, বিদ্রুপ করে দুই লাইন আপনার কলমে ধরবে না আর।
আপনারা আমার যুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে না পেরে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগে বুকে হাত রেখে নিজের কাছে প্রশ্ন করেন, কোভিডে এই গরিবদের দায় কতটুকু, যতটুকু আপনাদের, এলিটদের? রাষ্ট্র না চাইলে পথে দূরপাল্লার বাসে বিকল্প যান পাওয়া সম্ভব? রাষ্ট্র না চাইলে ফেরি চলবে? একটাও চলবে? প্রশাসন না চাইলে কোনো তালা খুলতে পারে কেউ?
“দোকান-মার্কেট থেকে শুরু করে যেখানেই ভিড়, সেখানেই অলিখিত সম্মতি আছে বিধায় সব চলছে” এই সহজ সত্য বুঝেও যারা আমার মতো গরিবকে পরিস্থিতি বুঝতে বলেন, গালি দেন, তাদের দিকে আমি সরল চোখে কেবল তাকিয়ে থাকি। একটু ভয়ও পাই যে, চোখ তো থাকবে পরে?
শেষ করার আগে এই কথা না বললে আপনারা পাল্টা আক্রমণ করবেন জানি। তাই বলে রাখা, এরকম নাজেহাল হয়ে গ্রামে যেতে চাই না আমি। বলছি না যে, এই যাত্রা ঠিক আছে। কিন্তু এইটাও বলছি যে, এর বহু বিকল্প আছে। বরং সেসবই কাম্য। এইসব যাত্রা পুলিশিং দিয়ে নয়, ব্যবস্থাপনা দিয়ে বদলাতে হবে।